Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

সর্জান পদ্ধতিতে খাটো জাতের নারিকেল ও ফল-সবজি চাষ

উপকূলীয় এলাকায় চরাঞ্চলে যেখানে জোয়ার ভাটার পরিস্থিতি বিরাজ করে, সেখানে সর্জান পদ্ধতি অবলম্বনে ফল-সবজি ও মাছ চাষ করা খুব সহজ এবং লাভজনক। এ পন্থায় চাষাবাদে খরচ কম, উৎপাদন ও আয় বেশি। বৃহত্তর বরিশাল জেলার অগ্রগামী চাষিরা এ পদ্ধতি অবলম্বনে বিভিন্ন প্রকার ফল পেয়ারা, কুল, লেবু, কমলা, মাল্টা, আমড়া, লিচু, কলা, পেঁপে, নানা রকম সবজি কচু, গিমাকলমি, শিম, বরবটি ও চিবিয়ে খাওয়া আখ আবাদ করে থাকে। নোয়াখালীর চরাঞ্চলেও সর্জান পদ্ধতি অনুকরণে বিভিন্ন ফল কলা, পেয়ারা, আমড়া, সফেদা, কুল, ডালিম, নারিকেল, সুপারি, আম চাষসহ নানা প্রকার সবজি ও অন্যান্য ফসল টমেটো, গিমাকলমি, শিম, মিষ্টিকুমড়া, মিষ্টিআলু, তরমুজ, চীনাবাদাম, ফেলন, খেসারি, তিল, মেথি চাষ করার প্রচলন খুব বেশি। বৃহত্তর ময়মনসিংহ, ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা, পাবনা জেলার নিচু জমিতে ও চর-হাওরে এ পদ্ধতি অবলম্বনে সফলভাবে ফল-সবজি চাষ করার সুযোগ আছে।
সর্জান পদ্ধতি : অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে যেখানে জলাবদ্ধতার কারণে পাট, ধৈঞ্চা, ডিপ ওয়াটার আমন ফসল ছাড়া স্বাভাবিকভাবে কোনো ফসল আবাদ করা সম্ভব হয় না সেখানে বিভিন্ন মাপের উঁচু বেড-বাঁধ তৈরি করে নিয়ে তাতে ফল চাষ উপযোগী করা হয়। দুইটি বেডের মধ্যভাগের মাটি খুঁড়ে বেডের দুই ধারে উঠিয়ে দিয়ে বেডগুলোকে সরেজমিন থেকে উঁচু করে নিয়ে বেড-বাঁধ ও নালা পদ্ধতির মাধ্যমে ফল-সবজি আবাদ করার এ পদ্ধতি সর্জান নামে পরিচিত। জমির অবস্থান এবং সেখানে কি ফসল চাষ করা হবে, স্থানভেদে ও এলাকার চাষির পছন্দ বিবেচনায় বেডের চওড়া ও নালার গভীরতা ঠিক করে নেয়া হয়। ভূমির অবস্থা অনুসারে এ বেড লম্বায় ২০ ফুট থেকে ২০০-৩০০ ফুট পর্যন্ত করা যায়।
এলাকার অবস্থা ও জমির আকার আকৃতি বুঝে এ পদ্ধতির জন্য বেডের বা বাঁধের উচ্চতা ও চওড়া ঠিক করা হয়। দুইটি বেডের মধ্যবর্তী নালার চওড়া ও গভীরতা সেভাবে চূড়ান্ত করা হয়। নোয়াখালী জেলার চরে যেসব অংশে কেবল মৌসুমি সবজি আবাদ করা হয় সেখানে ২-৩ ফুট চওড়া বেড এবং চওড়ায় ও গভীরতায় ২-৩ ফুট দেয়া হয়। বিশেষ করে যেসব উপকূলীয় এলাকায় যেখানে জোয়ার-ভাটার প্রভাব রয়েছে সেখানে এ মডেলের বিভিন্ন সংস্কার অবলম্বনে ফল-সবজি চাষ অতি জনপ্রিয়। নালা জোয়ারের পানিতে ভরে গেলে, এমনকি কয়েক ঘণ্টা তলিয়ে গেলেও আবাদকৃত নির্বাচিত ফল-সবজির তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। বিশেষ করে নারিকেল গাছ এ ধরনের পরিস্থিতিতে খুব সহজেই বেড়ে উঠে, প্রচুর ফল দানে সক্ষম হয়। নালায় পানি থাকায় বেডে রোপিত গাছগুলোতে পানি সেচের প্রয়োজন হয় না। গাছগুলো নালার পানি পরোক্ষভাবে শুষে এবং ভালোভাবে বেড়ে উঠে এবং প্রচুর ফল দানে সক্ষম হয়।
খাটো জাতের নারিকেল চাষের জন্য মডেল : এ পদ্ধতির ক্ষেত্রে নির্ধারিত নিম্ন জমিতে একটা ১০ ফুট মাপের চওড়া বেডের উভয় পার্শ্বে ১০ ফুট চওড়া এবং ২.৫ ফুট গভীর নালা তৈরি করা হয়। একেকটা তৈরিকৃত নালার উভয় পাশে সমপরিমাণ মাটি উঠিয়ে দেয়ার ফলে সমতল থেকে তা প্রায় ২ ফুট উঁচু বেড তৈরি করা হয়। এ ব্যবস্থায় উঁচু বেড বা বাঁধ উঁচু হওয়ায় তা জলাবদ্ধমুক্ত হওয়ার ফলে সেখানে নারিকেলসহ অন্যান্য মধ্যমেয়াদি ফল ও মৌসুমি সবজি চাষের জন্য অতি উপযোগী করা হয়। নালায় পানি সহনশীল জাতের কচু ও মাছ চাষ করার অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়। এছাড়া উঁচু বা বাঁধের কিনারে লতা জাতীয় সবজি লাগিয়ে এ সবজিকে ড্রেনের উপরিভাগের নালায় অস্থায়ী মাচা তৈরি করে তাতে লতা জাতীয় সবজিগুলো উঠিয়ে দেয়া হয়। সর্জান পদ্ধতিতে খাটো জাতের নারিকেল ও তার বিভিন্ন উপযোগী অংশে মধ্যমেয়াদি ফল, মৌসুমি সবজি ও মাছ চাষের নমুনা চিত্রে দেয়া হলো। এটা বরিশাল জেলার রহমতপুর, হর্টিকালচার সেন্টারে অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে যেখানে বর্ষাকালে তিন মাসব্যাপী প্রায় ১-১.৫ ফুট পানি জমে থাকে তথায় ৩০০টি খাটো ভিয়েতনামি জাত দিয়ে বাগান সৃষ্টি করা হয়েছে। এ পদ্ধতি অবলম্বনে সৃষ্ট মডেল বাগান এ অঞ্চলের আগ্রহী চাষি ও সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের জন্য দেখে শেখার একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করা হয়েছে।
ডাবল পদ্ধতিতে খাটো জাতের নারিকেল চাষ : এ পদ্ধতির ক্ষেত্রে বেডের মাপ চওড়ায় ১০ ফুটের পরিবর্তে ২০ ফুট চওড়া করতে হবে। দুইটি ২০ ফুট চওড়া বেডের মধ্যভাগে যে নালা তৈরি করা দরকার হবে তার মাপ চওড়ায় হবে ১০ ফুটের পরিবর্তে ১৬ ফুট। মাটির অবস্থা বুঝে বেড সরেজমিন থেকে ২-৪ ফুট করার প্রয়োজনে প্রায় ৩-৪ ফুট গভীর করে নালা তৈরি করা প্রয়োজন হতে পারে। নালা তৈরি করার সময় প্রায় ১ ফুট ঢালু রাখতে হবে তাতে বেডের মাটি ভেঙে পড়বে না। তাই নালার ওপরের ভাগ ১৬ ফুট হলে নি¤œাংশ নালার চওড়ায় ১৪ ফুট হবে। যেহেতু এখানে তৈরি বেড-বাঁধ চওড়ায় ২০ ফুট হবে তাই এ মডেলে এক সারির পরিবর্তে দুই সারি নারিকেল চারা ২০ ফুট দূরত্বে কিনারা থেকে ৪ ফুট ভেতরে চারা রোপণ করা হবে। এ ডাবল রো (Row) বা সারিতে নারিকেল চারা রোপণের ক্ষেত্রে পাশাপাশি চারা রোপণ না করে জিগ-জ্যাগ বা ত্রিকোণী-ত্রিভূজি পদ্ধতি অবলম্বনে তা রোপণ করতে হবে। তাতে গাছ বেশি পরিসরে আলো বাতাস পাবে, গাছ ভালোভাবে বেড়ে উঠার সুযোগ পাবে, ফলন বেশি দিবে।
এরই মধ্যে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার জাহাইজ্জার চরে সংশোধিত এ সর্জান পদ্ধতি অবলম্বনে প্রায় ২ হাজার খাটো ভিয়েতনামি জাতের একটা বড় আকারে নারিকেল বাগান সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ নারিকেল বাগান সৃষ্টিতে ডাবল সারি পদ্ধতি অবলম্বনের সুপারিশ করা হয়েছে। এ সংশোধিত মডেল অনুকরণ করে তা অন্যান্য চরগুলোতেও বেশি করে খাটো জাতের আমদানিকৃত নতুন নারিকেল বাগান সৃষ্টি করে তার সুফল আহরণ করা জরুরি।
বাংলাদেশে যেসব নারিকেল চাষ করার প্রচলন আছে তা লম্বা জাতের এবং শত শত বছরের পুরনো জাতের। এ লম্বা জাতের নারিকেল গাছ ঝড়ো বাতাসে টিকতে পারে না, অনেক সময় ভেঙে পড়ে। পৃথিবীর নারিকেল উৎপাদনকারী অগ্রগামী দেশগুলো বর্তমানে খাটো ও হাইব্রিড মাঝারি, খাটো জাতের নারিকেল চাষ অত্যধিক জনপ্রিয়। কয়েকটা দেশের মধ্যে ভারত এ ক্ষেত্রে এক ধাপ এগিয়ে। এ দেশে ডিজে সর্ম্পূণা নামে একটা মধ্যম খাটো জাতের হাইব্রিড নারিকেল জাত সম্প্রসারণে ব্যাপক হারে উৎপাদন করে চলেছে। দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বেশ কিছু সংখ্যক উপকূলীয় দেশে তা রপ্তানি করে এ জাতের চারা বিপণন করে যথেষ্ট বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে চলেছে। কৃষি মন্ত্রণালয় গত বছর ভিয়েতনাম, ভারত থেকে এ ধরনের উদ্ভাবিত উন্নত জাতের নারিকেল চারা আমদানি করে তার সুফল আগ্রহী জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার মহৎ কাজটা করে যাচ্ছে। দেশি জাতগুলো থেকে এ জাতগুলোর ফল দান ক্ষমতা ৩-৪ গুণ বেশি। অধিকন্তু, এসব জাতের নারিকেল চারা রোপণের ৩ বছরের মধ্যেই ফল দানে সক্ষম। এরই মধ্যে এসব আমদানিকৃত লক্ষাধিক নারিকেল চারা বিতরণ ও তা দিয়ে বাগান সৃষ্টি করা হয়েছে। চলতি বছরে আরও কয়েক লাখ এসব উন্নত ভিয়েতনামের খাটো ও ভারতের হাইব্রিড জাতের নারিকেল চারা আমদানি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ খাটো জাতের নারিকেল আগ্রহী চাষিদের মাঝে ডিএই এর বিভিন্ন হর্টিকালচার সেন্টার থেকে অথবা কাছের উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তায় বিতরণ করার কাজ অব্যাহত রয়েছে। দেশের সব আগ্রহী ফলচাষি বিশেষ করে উপকূলীয় জেলায় বাগান সৃষ্টিতে এ খাটো জাতকে প্রাধান্য দিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের এ মহৎ উদ্যোগকে সফল করতে সবার সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন।

এম এনামুল হক*
*মহাপরিচালক (অব.), ডিএই, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, ঢাকা-১২১৫


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon